শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বান্দরবানে আদিবাসী বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের ঠিকানা কোয়ান্টাম স্কুল


dailycht.com
বিশেষ প্রতিবেদক
বান্দরবানের লামা উপজেলা সদর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সরই ইউনিয়ন। সেখানের পাগলী খালের আগায় পাহাড়, ঝিরি, ছায়াঘন বনবনানী পরিবেষ্টিত অসংখ্য বন্য পশুপাখির বিচিত্র ডাকে মুখরিত নির্জন স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৯ সনে আধ্যাত্মিক পুরুষ ‘গুরুজী শহীদ আল বোখারী মহাজাতক’ এর দুঃসাহসী ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এটি প্রতিষ্ঠার পর প্রত্যন্ত ও দুর্গম পাহাড়ের ভাঁজে-ভাঁজে যেন বেজে উঠে অন্য আরেক রোমাঞ্চকর জেগে ওঠার উচ্চসিত শাশ্বত রাগীনির অমোগ সুর-মূর্ছনা।

বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে ভ্রমণপিপাসুরা আসা যাওয়া করেন। পাহাড়ের নির্জন স্থব্ধতার মিছিলের সাথে একাত্ম হয়ে যায় মৌন-মহান অন্তর্দর্শন অন্বেষার মেডিটেশন-ধ্যান কর্মসূচি। আধ্যাত্মিক সাধনার স্থান হিসেবে গড়ে ওঠার কারণে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বোধিছড়া’।

তারই ফাঁকে গুরুজী প্রত্যক্ষ করলেন, পাহাড়ের অরণ্যচারী সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া আদিবাসী গোষ্ঠীসহ বাঙ্গালি সন্তানদের দুর্বিসহ প্রাকৃতিক জীবনযাপনের অমানবিক করুণ পরিণতি। তিনি উতলা হয়ে উঠলেন; কি করে তাদের জীবনমানের বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধন করা যায়। তিনি বুঝতে পারলেন, একমাত্র শিক্ষার অভাবেই পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষগুলোর এই করুণ পরিণতি রোখা সম্ভব। আধুনিক চিন্তাচেতনায় এদেরকে উজ্জীবিত করতে হলে প্রয়োজন শিক্ষার পাদপ্রদীপে নিয়ে আসা। গুরুজীর এই আগ্রহ বাস্তবায়নের কাজে তাঁর হাজারো সামর্থ্যবান ও দানশীল অনুসারীদের একাত্ম হতে বেশি সময় লাগেনি। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এন্ড কলেজ’।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, ৫০জন নিষ্ঠাবান শিক্ষকের পরিচালনায় এবং সেই সাথে আরো ৭৮জন তত্ত্বাবধায়কের নিরলস প্রচেষ্টায় ‘কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এন্ড কলেজ’ এ নার্সারি থেকে এসএসসি পর্যন্ত প্রায় ১০০০জন শিক্ষার্থী আলোর পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে। তাদের খাওয়া, পড়া ও থাকা সম্পূর্ণ ফ্রি। এতে করে স্থানীয় পাহাড়ী সম্প্রদায় শিক্ষা দিক্ষায় আগের তুলনায় অনেক এগিয়ে।

জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি এবং সদর উপজেলার অনাথ এবং শিক্ষাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ যাবতীয় পরীক্ষা শেষে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করা হয় এখানে। অন্যান্য অবকাঠামো শিশু পার্ক, লাইব্রেরি, আবাসস্থল, হাসপাতাল, মিনি চিড়িয়াখানা, ছোট ছোট অসংখ্য কটেজসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে বাকি জমিগুলোতে। কোয়ান্টামে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ছাড়াও কোয়ান্টাম চিকিৎসক, স্বাস্থ্য সেবিকাসহ বিভিন্ন কাজের কর্মকতা-কর্মচারী রয়েছে প্রায় দুশ জন।

কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এন্ড কলেজের তত্ত্বাবধায়ক সালেহ আহামদ বলেন, এলাকার ১৭ টি জাতিগোষ্ঠীর ৬টি ধর্মের ১০০০ জন আবাসিক ছাত্রের জন্য ৯টি আবাসিক হল, ২টি অডিটোরিয়াম, ২টি লাইব্রেরি, ৩টি খেলার মাঠ ও নানা আয়োজনে সমৃদ্ধ ২টি শিশু পার্ক রয়েছে। এখানে দেশের প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অফুরন্ত সুপ্ত প্রতিভার সর্বতোমুখী বিকাশ সাধনে লক্ষে মেডিটেশন নৈতিক শিক্ষা কার্যক্রম, চারু ও কারুকলা, সংগীত, নৃত্যকলা, খো খো, হ্যান্ডবল, কারাতে, ইয়াহু (ম্যারাথন ও মিনি) এবং পাহাড়ী গোষ্ঠীসমূহের সংস্কৃতি চর্চা কার্যক্রম প্রভৃতি বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য তুলে ধরে তত্ত্বাবধায়ক সালেহ আহামদ জানান, গত শিক্ষাবর্ষে পিএসসিতে ৩৯জন শিক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ উত্তীর্ণ হয়। তম্মধ্যে ২৯ জন- এ+, ১০ জন- এ গ্রেড পায়। জেএসসিতে ৩১=জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ উত্তীর্ণ হয়। তম্মধ্যে ১৬ জন এ+, ১৫ জন এ গ্রেড লাভ করে। এসএসসি পরীক্ষায় ১৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ উত্তীর্ণ হয়।



ক্রীড়া ক্ষেত্রে সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, অনুর্ধ ১৬ বিশ্ব যুব অলিম্পিক গেমস্ ২০১৪’র ২৯তম সাব কন্টিনেন্টাল কোয়ালিফাইংয়ে ‘আরচ্যারি’ ইভেন্টে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র প্রেননং মুরুং একমাত্র প্রতিযোগী নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ৮ম বাংলাদেশ গেমসে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক অর্জন, জাতীয় বয়সভিত্তিক জিমন্যাস্টিকসে স্বর্ণপদক জয়, জাতীয় স্কুল খো খো-তে চ্যাম্পিয়ন, জাতীয় খো খো-তে রানার আপ ও ৩য় স্থান লাভ, জাতীয় খো খো দলে খেলার যোগ্যতা লাভ, হ্যান্ডবলে প্রথম বিভাগে উন্নীত, জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হ্যান্ডবলে চ্যাম্পিয়ন, বান্দরবান কমিউনিটি পুলিশ হ্যান্ডবলে চ্যাম্পিয়ন, জাতীয় অনূর্ধ-২১ হ্যান্ডবলের বাছাই ক্যাম্পে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন, জাতীয় স্কুল-মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিয

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন