মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৭

অরণ্যভূমি খাগড়াছড়ি


ভ্রমন
টাইমস২৪:


রিছাং ঝর্ণা, মাটিরাঙ্গা
সমির মল্লিক : এবারের ভ্রমণ গন্তব্য পাবর্ত্য জেলা খাগড়াছড়ি। উপত্যকা, ঝরনা, পাহাড়, উজান থেকে বয়ে আসা খরস্রোতা চেঙ্গী নদী।মেঘ আর সবুজের সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে অরণ্যভূমি খাগড়াছড়িতে। শহর ছেড়ে পাহাড়ের ঢুকতেই চোখের পড়বে রামগড় চা বাগানের সবুজ চাদরে ঢাকা পাহাড়গুলো। পথের পাশে চা বাগানের রূপ দেখে মুগ্ধ হবে যে কেউ। বাগানের সীমানার সৌর্ন্দয্য শেষ হতে না হতেই চোখে আটকে যাবে বিস্তৃত সব রাবারের বাগানে। এর ভেতরে আলো ছায়ার নাচন দেখতে দেখতে বাস এগিয়ে যাবে পাহাড়ের পথ ধরে, রাবার বাগানের ভিতর দিয়ে চলে যাওয়া এমন মৃসণ পথ শেষ করে প্রথম যাত্রা বিরতি মানিকছড়িতে। মানিকছড়িতেই সকালের নাস্তা সারা। তারপর আবার রওনা। পথের দুপাশে উঁচুনিচু পাহাড়ের সারি, পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের অবিচ্ছেদ মিলন, চারপাশের ঘন মেঘের কুণ্ডলী ঘিরে রেখেছে উঁচু পাহাড়ের চূড়াগুলোকে।


খাগড়াছড়ি যাবার পথে মানিকছড়ির অপরুপ রাস্তা
রামগড়ের চা বাগান, পথের পাশের দৃষ্টি নন্দন সারি সারি রাবার বৃক্ষ, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা এসব জনপথ শেষে করে বাস থামল আলুটিলায়।

বাস থেকে নামতেই চোখে পড়ে বিশাল বটবৃক্ষের পাদদেশে লেখা, ‘আপনি কি একজন সাহসী অভিযাত্রী, তাহলে রহস্যময় সুড়ঙ্গে আপনাকে স্বাগতম’। সুড়ঙ্গে পথ চলার জন্য সঙ্গে নিতে হয় বাঁশের মশাল। ভিতরে ঢুকতেই শীতল জলের প্রলেপ, পাথুরের পথ বেয়ে জলের স্রোত বয়ে যাচ্ছে সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে। মশালের আলোয় সুড়ঙ্গের ঘুটঘুটে অন্ধকার দূর করে সামনের দিকেই যেতেই মনে হল— প্রাগৈতিহাসিক সময়ে প্রাচীন পাথরে মোড়ানো গুহার কালো আবরণ। পাথুরে পিচ্ছিল পথের গুহাতে হাঁটতে বেশ সাবধান হতে হল। জল, পাথর আর অমৃসণ অন্ধকার সুড়ঙ্গে মশালের আলো হাতে পথ চলতে চলতে যেন সত্যিকারের অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পাওয়া যায়। হঠাৎ সুড়ঙ্গের ভিতর থেকে দিনের আলো দেখে সবার মধ্যে কেমন জানি একটা উচ্ছ্বাসের প্রাণ। অন্ধকার পথ শেষ করে উপরে উঠতেই এক নজরে দেখে নিলাম গুহার প্রবেশ মুখ। আলুটিলা পাহাড় থেকে খাগড়াছড়ি শহর দেখতে বেশ, মনে হয় কোনো পাখির চোখে পুরো শহরটাকে দেখছি। পাহাড়ের পাদদেশ বিস্তৃত, শহরে সীমানা পযর্ন্ত।


আলুটিলা পাহাড় থেকে খাগড়াছড়ি শহর
দুপুরের আহার জন্য বেছে নিতে পারেন খাগড়াছড়ির নামকরা খাবার ঘর ‘সিস্টেম রেস্টুরেন্টে’। বাহারি আদিবাসী খাবার ভোজনের ষোলোয়ানা পূর্ণ করবে।

আহার পর্ব শেষ করে, বিকালের সোনালি আলোয় চাঁদের গাড়িতে যাত্রা শুরু রিছাং ঝরনার পথে। মূল সড়ক থেকে রিছাং ঝরনার দূরত্ব প্রায় ২.৫ কিলোমিটার। পথের পাশে সৌর্ন্দয্য প্রকৃতি যেন তার নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন। চেনা-অচেনা বুনোফুল, কাশবনের পথ পেরিয়ে চাঁদের গাড়ি থেকে নেমে এবার ঝরনার পথ। সিঁড়ি বেয়ে ঝরনার কাছে পৌঁছতেই চোখ আটকে গেল সবার। পাহাড়ের ওপর থেকে বয়ে আসা ঝরনার স্রোতধারা আবার দীর্ঘ ক্যাসকেড বেয়ে আছড়ে পড়ছে নিচের দিকে। রিছাং খুব বেশি বড় না হলেও ঝরনার নান্দনিক কাঠামো মুগ্ধ করে সবাইকে। রিছাং ঝরনা শীতল জলের পরশ গায়ে লাগিয়ে ফিরতে ফিরতে তখন দূর পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়েছে সুর্য। শেষ বিকেলের আলোয় পাহাড়ের বুকে ডুবন্ত রবির রঙিন দৃশ্যায়ন দেখতে দেখতে চাঁদের গাড়ির খোলা ছাদে বসে আবার ফিরছি লোকালয়ের পথে।


কুয়াশার চাদর, খাগড়াছড়ি
যেভাবে যাবেন প্রথমে যেতে হবে চট্টগ্রাম। সেখান থেকে শান্তি পরিবহন, এস আলম, সৌদিয়াসহ বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে সরাসরি খাগড়াছড়ি শহরে পৌঁছানো যায়। এছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পযর্ন্ত বিভিন্ন পরিবহনের বাস খাগড়াছড়িতে যাতায়াত করে। আর রিজার্ভ গাড়ি নিয়েও সরাসরি খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়।

প্রয়োজনীয় তথ্যঃ মানুষ প্রকৃতির কাছে যাবে। তবে প্রকৃতি যাতে তার মতো করে সুন্দর থাকে সেই দায়িত্বটাও মানুষের হাতে। তাই আলুটিলা, রিছাংসহ পযর্টন স্পটগুলোতে কোনো প্রকার পলিথিন, পানির বোতল, প্যাকেট, ময়লা ইত্যাদি নিদিষ্ট স্থানে ফেলবেন। না হলে সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন। খাগড়াছড়ি ভ্রমণে যে কোনো তথ্য এবং সহযোগিতার জন্য ফোনে যোগাযোগ করতে পারেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন