সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭

নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের সেই গোপন ভিডিও







জাতীয় মেইল:
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আগে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করা হয়।

ভারতীয় সীমান্তবর্তী একটি বিএসএফ ক্যাম্পে তাকে জেরা করেন বাংলাদেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।

এ সময় নূর হোসেন সাত খুনের আদ্যোপান্ত খুলে বলেন। নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের পুরো বিষয়টি ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করা হয়।

আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে ভিডিওর একটি কপি যুগান্তরের হাতে এসে পৌঁছেছে।

ভিডিওতে নূর হোসেনকে একজন কর্মকর্তা প্রশ্ন করেন, র‌্যাব কী ইন্টারেস্টে সাতজন মানুষকে মেরে ফেলল?

উত্তরে নূর হোসেন জানান, তিনি শুধু প্যানেল মেয়র নজরুলকে মারার জন্য র‌্যাবের সঙ্গে কন্টাক্ট করেছিলেন। তবে মেজর আরিফও নজরুলকে সরিয়ে দেয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন। কারণ মেজর আরিফের সঙ্গে নজরুলের জমি দখলের দ্বন্দ্ব ছিল।

ভারতে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে নূর হোসেন বলেন, ঘটনার পর সবাই বলল র‌্যাব আমাকে পেলেই মেরে ফেলবে। তাই প্রাণ বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে আসি।

নিজের উত্থান ও সিদ্ধিরগঞ্জে নিজের মাদক সাম্রাজ্য নিয়ে নূর হোসেন বলেন, 'আমি মূলত বাসের হেলপার ছিলাম। অনেক কষ্ট কইরা এই জায়গায় আইছি। ১৮ বছর ওয়ার্ড কাউন্সিলর, আমার লোকজন তো থাকবই।'

এ সময় নূর হোসেন দাবি করেন, মাদক সাম্রাজ্য থেকে তার প্রতিদিন যে আয় হতো তার একটি বড় অংক পেত পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব ও স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমকর্মী। যারা টাকা নিতেন তারা সবাই নূর হোসেনের কথামতো কাজ করতেন।

বিশেষ করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি আব্দুল মতিন নূর হোসেনের কথায় ওঠাবসা করতেন বলে দাবি করেন নূর হোসেন।

জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে নূর হোসেন জানান, তার কাছে সার্বক্ষণিক ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র থাকতো। এর মধ্যে ১৪টির লাইসেন্স ছিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে তাকে একাধিকবার খুনেরও পরিকল্পনা করা হয়।

'কিন্তু আমারে মারতে কোনো কিলার রাজি হয় নাই' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যানেরও ব্যাপক দ্বন্দ্ব ছিল বলে দাবি করেন নূর হোসেন।

তিনি বলেন, 'আমার কাছে লিখিত এভিডেন্স (প্রমাণ) আছে, যেখানে প্রকাশ্যে শহীদ চেয়ারম্যান বলেছেন- নজরুলকে তিনি পিটিয়ে মেরে ফেলবেন।'

নূর হোসেন আরও বলেন, ভারতের কারাগারে থাকার সময় বাংলাদেশ থেকে তার লোকজন নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো। ভারতের কারাগারে তিনি ভালোই ছিলেন। এ কারণে তিনি দেশে ফিরতে রাজি ছিলেন না।

দীর্ঘ ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে নো ম্যানস ল্যান্ডে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ, তদন্তকারী কর্মকর্তা, নারাণগঞ্জ জেলা ডিবির সদস্য, বিজিবি ও র‌্যাবের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল।

নো ম্যানস ল্যান্ডে নূর হোসনেকে  নিয়ে আসা হলে তাকে রিসিভ করা জন্য এগিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু বিএসএফ পুলিশের হাতে নূর হোসেনকে হস্তান্তরে অস্বীকার করে।

এ সময় একজন পদস্থ বিএসএফ কর্মকর্তা জানতে চান, এখানে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান উপস্থিত আছেন কিনা? কারণ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে জিয়াউল আহসান ছাড়া অন্য কারও কাছে নূর হোসেনকে যেন হস্তান্তর করা না হয়।

পরে জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে র‌্যাবের পরিচালক (অপস) আবুল কালাম আজাদসহ তিনজন র‌্যাব কর্মকর্তা নূর হোসেনকে গ্রহণ করেন।

শেষ রাতের দিকে নূর হোসেনের হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হয়। এরপর তাকে হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে ঢাকার পথে রওনা দেয় র‌্যাব।



4.26K 0 0 0

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন